এবারের বইমেলায় আমি আমার কোম্পানি Light of Hope Ltd. এর Co-founder & CEO হওয়া সত্ত্বেও স্টলে দাঁড়িয়ে বই বিক্রি করেছি। উদ্যোগতাদের জন্য কিছু লার্নিং শেয়ার করছি সেই অভিজ্ঞতার আলোকে। প্রত্যেকে তাদের নিজেদের ব্র্যান্ডের সাথে বা ব্যবসার সাথে মিলিয়ে নিবেন। আমি বইকে একটা 'প্রোডাক্ট' হিসাবে ফোকাস করে লিখছি এখানে।
আমরা নতুন প্রকাশক হিসাবে এই বছর প্রথম স্টল পেয়েছি। এবং অন্য প্রায় সব শিশুতোষ বইয়ের প্রকাশনার চেয়ে বেশি বই বিক্রি করছি। যদিও আমাদের এখানে কোন বাইরের লেখক বা Content Developer আমরা নেই নাই। কারণ আমরা আগে প্রকাশক হিসাবে ব্র্যান্ড তৈরি করতে চেয়েছি।
আরও বড় কারণ হল আমাদের প্রতিটি বই শিশুদের Creativity, Problem-solving skill, values, empathy এবং পাশাপাশি Academic outcome ফোকাস ছিল। তাই অন্য সবার যেখানে খালি গল্পের বই সেখানে আমাদের বইগুলোর কারণে প্রকাশক হিসাবে আমাদের অন্য সবার চেয়ে আলাদা করে ফেলেছে।
বইমেলায় আমি নিজে স্টলে দাঁড়িয়ে বই বিক্রি করেছি। শিশুদের এবং অভিভাবকদের বই কেনার ক্ষেত্রে আচরণ এবং চাওয়া লক্ষ্য করেছি। বইমেলার অন্য স্টলে স্টলে গিয়ে জিজ্ঞেস করেছি কোন বইগুলো আপনাদের বেশি চলছে, কে কত টাকার বই বিক্রি করেছে ইত্যাদি। তারপর সেগুলো নিজে কিনে এনেছি দেখার জন্য যেন বুঝতে পারি কেন এই বইগুলো ভালো চলছে।
এই যে অভিজ্ঞতাগুলো আমি নিজে নিয়েছি তার থেকে আমরা পরের বছর যে জিনিস বের করবো সেগুলো আরও বেশি ভালবাসবে শিশু এবং অভিভাবকরা।
পুরো বইমেলায় স্টলে থেকে এবং অন্য সবার থেকে কি কি শিক্ষা আমি উদ্যোগতার জন্য পেয়েছি?
১। কাস্টমারকে আরও ভালোমতো বোঝার জন্য দরকার হলে নিজে সরাসরি সেলস যেখানে হয় সেখানে যাওয়া, নিজে বিক্রি করার চেষ্টা করা। সেলস টিম রেখে হবে না সেটা। আপনি নিজে যতটা ভালো explain করতে পারবেন সেটা অন্য কেউ পারবে না। এরপর যখন প্রোডাক্ট বা সার্ভিস ব্র্যান্ড দাঁড়িয়ে যাবে তখন সেলস টিমের উপর ভরসা করতে পারবেন। Horlicks এর সেলস টিমের লোক দোকানে দাঁড়িয়ে বিক্রি করে না এখন, কিন্তু একটা সময় করেছে।
২। সবসময় অন্যরা যা করছে তার চেয়ে আলাদা কিছু করা। সেটা যতই পাগলামি মনে হোক না কেন। শিশুদের বইয়ের বাজারে আমরা অল্প কিছুদিনের মধ্যে একটা ব্র্যান্ড দাঁড়া করাতে পেরেছি কেবল এই কারণে।
৩। নিজের প্রোডাক্ট বা সার্ভিসের ব্র্যান্ড দাঁড়া করানো। অন্যর নাম বা ব্র্যান্ডের উপর দাঁড়িয়ে নিজের ব্র্যান্ড দাঁড়াবে না কোনোদিন। আজকে আপনি বই দিয়ে ব্র্যান্ড দাঁড়া করাতে পারলে, কালকে খেলনা দিয়েও করতে পারবেন (আমরা ইতিমধ্যে এটা শুরু করেছি)
৪। ভবিষ্যতে আরও কি কি আনবেন সেটার প্রস্তুতি আগে থেকে নিয়ে ফেলা। আমরা ইতিমধ্যে পরবর্তী বইমেলার আগে পুরো বছর ধরে যেসব বই এবং প্রোডাক্ট বানাবো সেটার তালিকা তৈরি হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যে।
৫। আমি অন্য স্টলগুলো থেকে কোন কোন বইগুলো বেস্ট সেলার হয়েছে সেটার তথ্য নিয়েছি। দেখেছি তারা কি ধরণের বই তৈরি করছে। অন্যরা কি করছে সেটা নিয়ে অবগত থেকেছি। তার মানে এই না যে তারা যা করছে আমিও সেটা কপি করবো। কিন্তু তাদের প্রোডাক্ট বা সার্ভিস থেকে এমন কিছু একটা নিবো যেটা আমার নিজেরটাকে আরও ভালো করবে। কারণ দিন শেষে আমার প্রোডাক্ট, আমার ব্র্যান্ড আমার। অন্যকে কপি করতে গেলে নিজের identity হারিয়ে যাবে। এতে করে বর্তমান যে কাস্টমার আছে সেটাও হারাবে।
৬। যদি লেখক নিজে ব্র্যান্ড হয় তাহলে প্রকাশকের জন্য সেটা রিস্ক। কারণ লেখক যদি পরের বছর আর বই না দেয়, অন্য কাউরে দেয় - তাহলে ধরা। আয়মান যদি আদর্শকে বই না দেয় পরের বছর তাহলে ক্ষতি আদর্শর হবে, আয়মানের নয়। কিন্তু যদি প্রকাশক নিজেই ব্র্যান্ড হয়, তাহলে লেখক কে সেটা কোন ব্যাপার না। সিসিমপুর যেমন একটা ব্র্যান্ড, তাই তাদের বইয়ের লেখক কে সেটা নিয়ে অভিভাবক বা শিশু কেউ মাথা ঘামায় না। তাই নিজের কোম্পানির, বিশেষ করে স্টার্টআপের ক্ষেত্রে একটি অনেক বেশি প্রযোজ্য, ব্র্যান্ড নিজেকেই দাঁড়া করাতে হবে।
আমরা শিশুদের বইয়ের ক্ষেত্রে Goofi ব্র্যান্ডকে এমনভাবে দাঁড়া করিয়েছি যেন অভিভাবকরা জানেন আমাদের বইগুলো শিশুদের সৃজনশীলতা, সমস্যা সমাধানের দক্ষতা, তাদের নৈতিকতা ইত্যাদি বাড়াতে সাহায্য করে। বইগুলোর মান খুব উন্নত, এবং বইগুলো তৈরি করা হয় অনেক রিসার্চ করে। তাই ভবিষ্যতে আমাদের বইয়ের লেখক যারাই হোক না কেন, এই ব্যাপারগুলো থাকবে।
সব শেষ কথা
আমি যেটা বুঝেছি তা হল, আগে নিজের উদ্যোগটার একটা ব্র্যান্ড তৈরি করতে হবে। সেটা যে ধরণেরই উদ্যোগ হোক না কেন। ই-কমার্স, রাইড শেয়ার, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প, অথবা মোবাইল মানি, ঘরে বসে সেবা, বা আমাদের মতো শিশুদের প্রোডাক্ট - যাই হোক না কেন, দিন শেষে কেবল সেটাই ম্যাটার করে।
ব্র্যান্ড তৈরি করতে কেবল পণ্য বা সেবার মান থাকলেই হবে না, থাকতে হবে আরও কিছু এক্স ফ্যাক্টর। সেগুলোই খুঁজে বের করে ঠিকমতো execute করতে পারাটাই আসল। এটি নিজ নিজ উদ্যোগ এবং ক্লায়েন্ট অনুযায়ী আলাদা হবে অবশ্যই।
সবার উদ্যোগ সফল হোক। ব্র্যান্ড তৈরি করার চেষ্টা থাকুক সবার মনে।