বর্তমানে পৃথিবীতে বিদ্যমান সমস্যাগুলো এত বড় যে আমাদের একার পক্ষে সেগুলোর মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। এজন্য সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন যেখানে সকলে কম-বেশী অংশগ্রহণ করবে। যাদের বেশী আছে তারা যদি সামাজিক কাজে সম্পদ ব্যয় করে, একজন আরেকজনের সহায়তায় হাত বাড়িয়ে দেয়, সমাজের কল্যাণে ব্যয় করতে, আরও ভালো মানুষ হতে একে অপরকে উৎসাহিত করে তাহলেই পৃথিবীর সমস্যাগুলোর প্রকটতা কমিয়ে আনা বা নিশ্চিহ্ন করা সম্ভব। একক প্রচেষ্টায় আমাদের কারও পক্ষেই সমাজের সমস্যাগুলো সমাধান করা সম্ভব না হলেও সামষ্টিক প্রচেষ্টায় সম্ভব।
উদ্ভাসের সিএসআর কর্মসূচীর কেন্দ্রে রয়েছে এই দর্শন। উদ্ভাসের নানা ধরণের সিএসআর কর্মসূচীর মধ্যে অন্যতম হলো আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন এমন শিক্ষার্থীদেরকে সহায়তা প্রদান করা। এছাড়া রয়েছে রক্তদান কর্মসূচী যেখানে উদ্ভাসের শিক্ষার্থীরা রক্ত দান করে এবং প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের কল্যাণে পরিচালিত কিছু কর্মসূচী।
অপরকে সহায়তা করার জন্য শিক্ষার্থীদেরকে উৎসাহিত করার মাধ্যমে এই নানামুখী কার্যক্রমকে এক সুতোয় বেঁধেছে উদ্ভাস। যেমন, উদ্ভাসের পক্ষ থেকে যে সকল শিক্ষার্থীকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয় তাদের নিকট থেকে প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করা হয় যে তারা পড়াশোনা শেষ করে যখন সামর্থ্যবান হবে তখন সমপরিমাণ অর্থ অন্যকে সহায়তার উদ্দেশ্যে ব্যয় করবে। এই সহায়তা আরেকজন অভাবী শিক্ষার্থীকে হতে পারে অথবা অন্য যে কোন উপায়েও হতে পারে।
এই কর্মসূচীর চমৎকারিত্ব হলো - এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা শেখে যে সমাজের সকলেরই অপরের প্রতি দায়িত্ব-কর্তব্য রয়েছে, তারা বুঝতে পারে - সকলের মধ্যেই অপরকে সাহায্য করার মানসিকতা থাকা উচিত। উদ্ভাসের বক্তব্য হলো তাদের এই উদ্যোগ যদি যথেষ্ট সংখ্যক মানুষকে 'অন্যরকম মানুষ' হতে উৎসাহিত করে তাহলে গোটা পৃথিবীটা এমনিতেই একটি অসাধারণ বাসস্থানে পরিণত হতে পারে।
অন্যরকম মানুষ গড়ার ডোমিনো ইফেক্ট
উদ্ভাসের একদম গোড়ার সময় থেকেই তারা অভাবী শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহায়তা দিয়ে আসছে। যে সকল শিক্ষার্থীর আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে উদ্ভাসের পক্ষ থেকে নিয়মিতভাবে সহায়তা পেয়ে থাকে। উদ্ভাসের এই সিএসআর কর্মসূচী এখন বেশ সুসংগঠিত হলেও শুরুতে এমনটি ছিল না, বরং বলা যায় খুব এলোমলোই ছিল।
প্রথমদিকে এই কর্মসূচী চালানোর জন্য কোন সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি ছিল না। কোনরকম নথিপত্র ছাড়াই এই কার্যক্রম অনেকদিন চলেছে। তখন শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে মৌখিকভাবে প্রতিশ্রুতি নেয়া হতো যে, কয়েক বছর পরে তারা যখন সামর্থ্যবান হবে তখন তারাও অন্যকে সাহায্য করবে।
উদ্ভাসের কার্যক্রম যত বিস্তৃত হতে লাগলো, আর্থিক সহায়তার আবেদনের সংখ্যাও বাড়তে লাগলো। ফলে এক প্রকার বাধ্য হয়েই বৃত্তি কর্মসূচীর একটি সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি তৈরীর উদ্যোগ নিতে হলো। পরের বছরগুলোতে এই বৃত্তি কর্মসূচীর পাশাপাশি আরও কিছু উদ্যোগ নেয়া হয় এবং এ সকল কার্যক্রমের মধ্যে সমন্বয়ের জন্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যেই একটি সিএসআর বিভাগ খোলা হলো।
বর্তমানে উদ্ভাসের একটি পূর্ণাঙ্গ সিএসআর কর্মসূচী রয়েছে আর এর দায়িত্বে রয়েছেন সুমন কুমার সাহা। তিনি ২০১২ সালে উদ্ভাসে যোগদানের পর থেকেই সিএসআর বিভাগ দেখাশোনা করছেন।
"আমি ২০১২ সালে উদ্ভাসে যোগ দেই। আমি উদ্ভাসের সিএসআর প্রোগ্রামের সার্বিক দেখাশোনার দায়িত্বে আছি। এই বিভাগের অধীনে কয়েকটি কর্মসূচী রয়েছে। এর মধ্যে প্রধান হলো যে সকল শিক্ষার্থীর আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন তাদেরকে সহায়তা প্রদান। একদম শুরু থেকেই এই কার্যক্রম চলছে বলে এই কর্মসূচীর সেবাগ্রহীতার সংখ্যাও কম নয়। এছাড়া আমাদের রক্তদান কর্মসূচীও রয়েছে।"
শিক্ষার্থীদের জন্য আর্থিক সহায়তা কর্মসূচী
আগেই বলা হয়েছে, উদ্ভাসের এই কর্মসূচী স্বতঃস্ফূর্তভাবে, সুনির্দিষ্ট কোন প্রক্রিয়া ছাড়া শিক্ষার্থীদের প্রয়োজন থেকে উদ্ভব হয়েছে। যে সকল শিক্ষার্থীর অর্থাভাব ছিল তারা সাধারণত উদ্ভাসের অফিসে এসে ফি মওকুফ করার জন্য অনুরোধ করতো এবং সাধারণত কিছু ছাড়ও পেতো।
উদ্ভাসের শাখার সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা অনেক বেড়ে গেলো, একই সাথে এই ধরনের আবেদনের সংখ্যাও বাড়ল। ফলে সম্পূর্ণ সিএসআর বিভাগ পরিচালনার জন্য উদ্ভাস সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসরণের সিদ্ধান্ত নিল।
সুমন সাহা ফিউচার স্টার্টআপ এর সাথে আলোচনাকালে এই কর্মসূচীর বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন। "গত কয়েক বছরে আমরা সিএসআর কার্যক্রমের একটি সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়া গড়ে তুলেছি। যেমন ধরুন, আমাদের আর্থিক সহায়তা বা বৃত্তি কর্মসূচী। এখন যে সকল শিক্ষার্থী এই বৃত্তি কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ করতে আগ্রহী তাদেরকে প্রথমে শাখার দায়িত্বপ্তাপ্ত কর্মকর্তাকে তাদের সমস্যা সম্পর্কে অবহিত করতে হয়। আগে তারা সরাসরি সোহাগ ভাইকে (মাহমুদুল হাসান সোহাগ, অন্যরকম গ্রুপের চেয়ারম্যান) ফোন করতো। তখন এই কর্মসূচী সীমিত ছিল, ফলে তিনি নিজেই এই বিষয়টি দেখাশোনা করতেন। এখন তো আর সেই অবস্থা নেই। এখনও সোহাগ ভাইকে খুব সহজেই ফোনে পাওয়া যায় কিন্তু এই ধরনের প্রয়োজনে কেউ ফোন করলে তিনি সিএসআর ডিপার্টমেন্টে রেফার করে দেন। আমরা শিক্ষার্থীর আবেদন যাচাই করে তারপর তাকে পূরণ করার জন্য আবেদন ফরম দেই। লিখিতভাবে আবেদন করলে আমরা শিক্ষার্থী এবং তাদের পিতামাতা উভয়েরই সাক্ষাৎকার নেই, তাদের সমস্যার গভীরতা বোঝার চেষ্টা করি এবং সে অনুযায়ী সাহায্যের ব্যবস্থা করি। এই প্রক্রিয়াটি মসৃন এবং আমরা পুরো প্রক্রিয়াটিকে খুব দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করি।"
উদ্ভাসে যারা আর্থিক সাহায্যের আবেদন করেন তাদের প্রায় সবাই-ই আংশিক বা সম্পূর্ণ বৃত্তির জন্য মনোনীত হন। এই কর্মসূচীর শুরুতেই উদ্ভাস একটি নীতি গ্রহণ করেছিল এবং সেটি হলো - প্রত্যেক শিক্ষার্থী যার প্রকৃতপক্ষেই আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন এবং যে এই বৃত্তির জন্য আবেদন করেছে তাকে অবশ্যই সহায়তা প্রদান করা হবে। এমনকি যার সামান্য সহায়তা প্রয়োজন সেও এই সহায়তা পেতে পারে।
উদ্ভাসের এই বৃত্তি কর্মসূচীতে আরেকটি অভিনব দিক রয়েছে। এটি হলো বৃত্তি গ্রহীতাদের নিকট হতে ফেরত দেবার প্রতিশ্রুতি গ্রহণ। যখন কোন শিক্ষার্থী উদ্ভাসের বৃত্তি কর্মিসূচীর আওতায় সাহায্য গ্রহণ করে তখন তাকে একটি অঙ্গীকার করতে হয়-তার যখন যথেষ্ট সামর্থ্য হবে তখন কমপক্ষে সমপরিমাণ অর্থ এমন কাউকে দিবে যার কিনা আর্থিক সাহায্য প্রয়োজন। উদ্ভাস মনে করে এর মাধ্যমে সকলের কল্যাণের জন্য একটি ডমিনো ইফেক্ট তৈরী করা সম্ভব।
উদ্ভাসের অনেকগুলো সিএসআর কর্মসূচী রয়েছে। যে সকল শিক্ষার্থীর আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন তাদের জন্য রয়েছে আর্থিক সহায়তা কর্মসূচী। এর রক্তদান কর্মসূচী রয়েছে যেখানে উদ্ভাসের শিক্ষার্থীরা রক্ত দান করে। এছাড়া প্রত্যন্ত অঞ্চলের অভাবী শিক্ষার্থীদেরকে সহায়তার জন্যও কিছু কর্মসূচী রয়েছে। যে বিষয়টি এই সকল কর্মসূচীকে একসূত্রে বেঁধেছে তা হলো অসহায় মানুষের সেবা প্রদান এবং একে অপরকে সহায়তার দর্শন৷
সহায়তার ডমিনো ইফেক্ট
"আমরা বৃত্তির জন্য নির্বাচিত সকল শিক্ষার্থীর কাছ থেকে একটি লিখিত অঙ্গীকারপত্র নেই যেখানে তারা ভবিষ্যতে সামর্থ্যবান হওয়ার পরে অন্য কাউকে সমপরিমাণ অর্থের সহায়তা করার প্রতিশ্রুতি দেয়।"
সময়ের সাথে সাথে উদ্ভাস এই অঙ্গীকারের বক্তব্য এবং পদ্ধতিকে পরিশীলিত করেছে। সম্প্রতি এই অঙ্গীকারের সাথে এইটি টাইমলাইন নির্ধারণ এবং সে অনুযায়ী ফলো-আপ করার পদ্ধতি যুক্ত করা হয়েছে। এছাড়াও কী পরিমাণ অর্থ ফেরত দেয়া হবে তার একটি সুনির্দিষ্ট অংক শিক্ষার্থীরা তাদের অঙ্গীকারনামায় উল্লেখ করে। "বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা ৫-৭ বছরের মধ্যে একটি সময়কে বেছে নেয়। এর মানে হলো তারা মনে করছে এই সময়ের মধ্যে তারা বৃত্তিপ্রাপ্ত অর্থের সমপরিমাণ অর্থ সমাজের কল্যাণে ব্যয় করার জন্য উপযোগী হবে৷ কি পরিমাণ অর্থ তারা ব্যয় করবে সেটাও তারা ঠিক করে", বলেন সুমন সাহা।
প্রথমদিকে এই অঙ্গীকার মৌখিকভাবে গ্রহণ করা হতো। এ সকল শিক্ষার্থীদের ফলো-আপ করার কোন ব্যবস্থাও ছিল না। গত কয়েক বছরে এই প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। বর্তমানে উদ্ভাস শিক্ষার্থীদের করা অঙ্গীকারকে গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করে তাদের অঙ্গীকারপত্র এবং যোগাযোগের বিস্তারিত ঠিকানা সংরক্ষণ করছে।
"এই কর্মসূচী থেকে উপকৃত শিক্ষার্থীদের প্রকৃত সংখ্যা কত তা নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয় কারণ আমরা মাত্র ২০১২ সাল থেকে এগুলো সংরক্ষণ করছি। এর আগে, পুরো বিষয়টিই মুখে মুখে সম্পাদিত হতো। তারপর আমরা বুঝতে পারলাম এই বিষয়টি থেকে ভালো ফল পেতে হলে একটি সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি দরকার।" এই সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি তৈরীর ফলেই বর্তমানে এখন উদ্ভাসের সাথে শিক্ষার্থীদের যোগাযোগ বজায় থাকছে এবং তাদের বর্তমান অবস্থা ও অঙ্গীকারের ফলো-আপ করা সম্ভব হচ্ছে।
গত বছর থেকে উদ্ভাসের পক্ষ থেকে সাবেক শিক্ষার্থীদের সাথে ফোনে যোগাযোগ করে তাদের অঙ্গীকার সম্পর্কে স্মরণ করিয়ে দেয়ার কাজ শুরু হয়েছে। শিক্ষার্থীদের বর্তমান অবস্থা জেনে নিয়ে তারা যে অপরকে সমপরিমাণ অর্থের সহায়তা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সেটা মনে করিয়ে দেয়া হয় এবং সেই অঙ্গীকার পালনের অনুরোধ জানানো হয়।
পৃথিবীকে পাল্টাতে সামষ্টিক প্রচেষ্টা
উদ্ভাসের আর্থিক সহায়তা কর্মসূচীর সবচেয়ে বড় দিক এটা নয় যে এই উদ্যোগ অনেক মহৎ এবং শিক্ষার্থীদের জন্য খুবই সহায়ক বরং উদ্ভাসের প্রতিষ্ঠাতা ও টীমের উপলব্ধি এই কর্মসূচীর সবচেয়ে বড় শক্তি। তাদের বিশ্বাস, আমরা কেবলমাত্র তখনই পৃথিবীকে পাল্টে দিতে সক্ষম হবো যখন আমরা যথেষ্ট সংখ্যক মানুষকে জনগণের কল্যাণে কিছু না কিছু করার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে পারবো। তরুণ শিক্ষার্থীদেরকে হাতে কলমে দেখিয়ে দেয়ার চেয়ে উদ্বুদ্ধকরণের আরও ভালো কী উপায় থাকতে পারে?
সুমন জানান, শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহায়তা প্রদান এবং এর পরিবর্তে তাদের কাছ থেকে অঙ্গীকারপত্র গ্রহণ করার ধারণা উদ্ভাসের প্রতিষ্ঠাতাদের নিকট থেকে পাওয়া গিয়েছিল।
"আমাদের সিএসআর কর্মসূচী এবং শিক্ষার্থীদের নিকট হতে অঙ্গীকার গ্রহণের ধারণাটি সোহাগ ভাইয়ের মাথা থেকে এসেছে। তিনি মনে করেন আমরা এককভাবে সমাজ পরিবর্তন করতে পারবো না। সমাজে সত্যিকারের পরিবর্তনের জন্য সামষ্টিক প্রচেষ্টা প্রয়োজন। আমার একার পক্ষে অনেক মানুষকে সহায়তা প্রদান করা সম্ভব নয়। আমার ব্যক্তিগত সামর্থ্য সীমিত। আমার পক্ষে যা সম্ভব তা হলো পাঁচজনকে সহায়তা প্রদান করা এবং তাদেরকে আরও পাঁচজন বা তার বেশী মানুষকে সহায়তা করার জন্য উৎসাহিত করা। এই প্রক্রিয়া যদি চলতে থাকে তাহলে তাহলে সমাজ ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হবে।"
উদ্ভাস রক্তদান কর্মসূচী
উদ্ভাস তার সিএসআর কর্মসূচীকে শুধু আর্থিক সহায়তা প্রদানের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখেনি বরং রক্তদান কর্মসূচী এবং বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলের শিক্ষার্থীদেরকে সহায়তা প্রদান পর্যন্ত বিস্তৃত করেছে।
উদ্ভাসের রক্তদান কর্মসূচীও সুমন দেখাশোনা করেন। তিনি বলেন, "শিক্ষার্থীরা যদি রক্তদানে আগ্রহী হয় তবে আমরা তাদের রক্তের গ্রুপ ও অন্যান্য তথ্য সংরক্ষণ করি। রক্তের জন্য পরিচিত-অপরিচিত লোকদের কাছ থেকে আমরা প্রচুর কল পাই, তারা আমাদের অফিসেও উপস্থিত হয়। আমরা আমাদের সাধ্যমতো তাদেরকে সহায়তার চেষ্টা করি।"উদ্ভাসের কর্মচারীরা ও রক্ত দিয়ে থাকে।
গত কয়েক বছরের চেষ্টায় উদ্ভাসের রক্তদান কর্মসূচী একটি মজবুত অবস্থানে পৌঁছেছে এবং এর মাধ্যমে প্রতিবছর তারা ঢাকা ও ঢাকার বাইরে প্রচুর মানুষকে সহায়তা প্রদান করছে।
প্রসার
নিজস্ব শিক্ষার্থীদেরকে আর্থিক সহায়তা প্রদান ছাড়াও উদ্ভাস গ্রামাঞ্চলের সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের কল্যাণের জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। যেমনঃ বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ, দরিদ্র শিক্ষার্থীদেরকে আর্থিক সাহায্য প্রদান ইত্যাদি। "আমি উদ্ভাসে যোগ দেয়ার আগে থেকেই সোহাগ ভাই ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় গ্রামের শিক্ষার্থীদের সাহায্য করতেন যদিও তারা আমাদের শিক্ষার্থী নয়। এখন এ সকল কার্যক্রমকেই আরও সংগঠিত উপায়ে পরিচালনা করা হচ্ছে", জানান সুমন।
সহায়তার নীতি
যেখানে বৃত্তি কর্মসূচী বা ছাড় কিংবা ফি মওকুফের সুযোগ রয়েছে, স্বাভাবিকভাবেই সেখানে প্রয়োজন না থাকলেও অনেক মানুষ এই সুযোগ গ্রহণের চেষ্টা করে। উদ্ভাসেও তাই ঘটে। "যেহেতু আমাদের বৃত্তি কর্মসূচী অপেক্ষাকৃত সহজ, তাই অনেকেই এই কর্মসূচী থেকে সুবিধা গ্রহণের চেষ্টা করে", সুমন বলেন। তা সত্ত্বেও উদ্ভাস তার নীতিমালা কঠোর করতে আগ্রহী নয়।
উদ্ভাসের নীতিমালা এমনভাবে প্রণয়ন করা হয়েছে যেন কোন শিক্ষার্থী এই নীতিমালার কারণে প্রাপ্য সহায়তা থেকে বঞ্চিত না হয়। "সত্যিকারের প্রয়োজন নেই এমন কাউকে সহায়তা করা বরং ভালো কিন্তু প্রয়োজন আছে এমন কেউ যেন কোনভাবেই বঞ্চিত না হয় - উদ্ভাসের ম্যানেজমেন্টের পক্ষ থেকে এমন কঠিন নির্দেশনা দেয়া আছে", সুমন জানালেন।
এই নীতিই ঠিক করে দেয় উদ্ভাসের সিএসআর কার্যক্রম কিভাবে চলবে।
ভবিষ্যত পরিকল্পনা
সুমন জানিয়েছেন উদ্ভাসের বিশাল কোন লক্ষ্য নেই। "আমরা অবশ্যই সমাজে পরিবর্তন দেখতে চাই, সমাজ পরিবর্তন করতে চাই", তিনি ফিউচার স্টার্টআপকে বলেছেন, "কিন্তু আমরা একাই সেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবো এমনটা মনে করি না।"
এককভাবে চেষ্টা করার বদলে সবাই মিলে চেষ্টা করলে ফল পাওয়া যাবে, উদ্ভাসের বক্তব্য এটাই প্রতিফলিত করে। উদ্ভাস বিশ্বাস করে যে কোন ইতিবাচক পরিবর্তনের কেন্দ্রে থাকে জনগণ। সমাজে 'অন্যরকম মানুষ'-এর সংখ্যা বেশি হলে তবেই সমাজ পরিবর্তিত হবে। সেই লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য এই মডেলের ব্যাপক প্রয়োগ প্রয়োজন। এ কারণেই উদ্ভাস শিক্ষার্থীদের সহায়তা করার বদলে তাদের নিকট হতে অন্যকে সহায়তা করার প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করে। সেই শিক্ষার্থীরা যদি সহায়তার পরিবর্তে গ্রহীতার নিকট থেকে একই প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করে এবং এই প্রক্রিয়া যদি চলমান থাকে তবেই ডোমিনো ইফেক্ট তৈরী হবে এবং সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটবে।
এই পৃথিবী তখনই একটি চমৎকার বাসস্থানে পরিণত হবে যেদিন সকল মানুষের মধ্যে দয়া ও ভালোবাসার বিস্তৃতি ঘটবে। উদ্ভাসের সকল সিএসআর কার্যক্রম সে লক্ষ্যেই পরিচালিত হচ্ছে।